হাদিস (আরবি: حديث) হল ইসলামের অন্যতম মৌলিক উৎস, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বাণী, কর্ম, অনুমোদন এবং আচরণের বর্ণনা। হাদিস মুসলিমদের জন্য কুরআনের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে গণ্য হয়। হাদিসের মাধ্যমে মুসলিমরা ইসলামী জীবনব্যবস্থা, আইন, নীতি, এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করেন।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ফেসবুকে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ছোট ছোট হাদিস পোস্ট করতে চান কিন্তু খুঁজে পান না তাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি ছোট ছোট হাদিস পোস্ট। যেগুলো আপনি সহজে কপি করে ফেসবুকে কিংবা ইন্টারনেটে পোস্ট করতে পারেন।
আজকের লেখায় থাকছে মহানবীর এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস যা তিনি বলেছেন বিভিন্ন সময়ে এবং যেগুলো আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়। শর্ট হাদিস স্ট্যাটাস
যারা ছোট ছোট শিক্ষনীয় হাদিস শেয়ার করতে চান তারা অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি ফলো করুন। আশা করি উপকৃত হবেন।
শিক্ষামূলক ছোট হাদিস
আমরা আপনার জন্য কিছু শিক্ষামূলক ছোট হাদিস তুলে ধরছি:এই হাদিসগুলো আমাদের জীবনে অনুসরণ করা উচিত। এগুলো আমাদের চরিত্র গঠন, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “সর্বোত্তম মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।”
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।”
“পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।”
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুনিয়ার কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করে দিবেন।”
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই যে কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়।”
“যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।”
“মুমিনের জন্য মুমিন হল ইমারতের ন্যায়, এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে।”
“দয়ালু লোকদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর বাসিন্দাদের প্রতি দয়া কর, আসমানের অধিবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
“যে ব্যক্তি আমাদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
“সালাম প্রসার করো, খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো।”
“যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে না।”
“রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখো।”
“সত্য বলো, যদিও তা তিক্ত হয়।”
“সৎ কাজের পরামর্শ দেওয়া দ্বীনের অংশ।”
“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
“উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী কোন জিনিস কিয়ামতের দিন মীযানে থাকবে না।”
“তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম, যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।”
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়।”
“মুমিন কখনো একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।”
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।”
Read more: ইসলামিক স্ট্যাটাস ও ক্যাপশন islamic status
শিক্ষামূলক উক্তি ও শিক্ষণীয় স্ট্যাটাস
গুরুত্বপূর্ণ ছোট হাদিস

নিচে কিছু শিক্ষামূলক ছোট হাদিস দেওয়া হলো এই হাদিসগুলো ইসলামের মূল শিক্ষার সারসংক্ষেপ। এগুলো সহজ কিন্তু গভীর অর্থবহ। প্রতিটি হাদিস জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই হাদিসগুলো অনুসরণ করা উচিত। এই হাদিসগুলি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথে চলার শিক্ষা দেয়।
“সর্বোত্তম মানুষেরা হলেন যারা মানুষের জন্য উপকারী”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তির হাসি বেশি, তার দুঃখও বেশি হয়”
(সহীহ মুসলিম)
“অত্যাধিক খাওয়া তোমাকে অসুস্থ করে দেয়”
(আত-তাবরানি)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তার সমস্ত কাজ সঠিক হয়ে ওঠে”
(সহীহ মুসলিম)
“প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অন্তত এক বার হজ্জ করা ফরজ”
(সহীহ বুখারি)
“তোমরা তোমাদের দোয়া ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে শত্রুকে পরাজিত করতে পার”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দান করেন”
(সহীহ মুসলিম)
“মুসলিম কখনও মিথ্যা বলেনা”
(সহীহ মুসলিম)
“মানুষের দান ও সদকা তার সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়”
(সহীহ বুখারি)
“অসত্য বলার থেকে ভাল, নীরব থাকা”
(সহীহ মুসলিম)
“প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।”
“লজ্জা ঈমানের অংশ।”
“জান্নাতের চাবি হল সালাত।”
“সর্বোত্তম জিহাদ হল সত্য কথা বলা।”
দুআ হল ইবাদতের মজ্জা।”
“পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।”
“মুমিনের অন্তর হল রহমানের আরশ।”
“যে নিজেকে চিনল, সে তার রবকে চিনল।”
“তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না।”
“জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।”
“বেহেশতের পথ জ্ঞানের মাধ্যমে।”
“যে চুপ থাকল, সে নাজাত পেল।”
“দুনিয়া মুমিনের জেলখানা, কাফেরের জান্নাত।”
“যে ক্ষমা করল, আল্লাহ তার সম্মান বাড়ালেন।”
“সর্বোত্তম সদকা হল জ্ঞান বিতরণ করা।”
“যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তার জন্যও দোয়া করেন।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রাত্রি অতিবাহিত করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি জ্ঞান চায়, আল্লাহ তাকে বুঝের পথ দেখান।”
(সহীহ মুসলিম)
“তোমরা পরস্পরের সাথে ভালো আচরণ কর, আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি দুঃখের মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করে, তার জন্য রয়েছে বিশাল পুরস্কার।”
(সহীহ বুখারি)
“প্রত্যেকের জন্য তার কাজের ফল রয়েছে।”
(সহীহ মুসলিম)
“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লোক সেই, যে তার পরিবারের জন্য ভালো।”
(সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন, যারা অন্যদের সাহায্য করে।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি মানুষের জন্য ভালো কিছু চায়, আল্লাহ তার জন্য ভালো কিছু করবেন।”
(সহীহ মুসলিম)
“তোমরা এমন কাজ করো, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।”
(সহীহ বুখারি)
এই হাদিসগুলি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সুন্দর এবং ইসলামের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে সাহায্য করবে।
নামাজের ছোট হাদিস

নিচে নামাজের সম্পর্কিত ৩০টি ছোট হাদিস দেওয়া হলো এই হাদিসগুলি নামাজের গুরুত্ব এবং তা আদায় করার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করে। নামাজকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
“নামাজ ধর্মের মূল।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ হচ্ছে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সেরা উপায়।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর কাছে পবিত্র হয়ে ওঠে।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ আল্লাহর সাথে যোগাযোগের একটি বিশেষ সময়।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ মুসলিমের মুকাবিলার পথ।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ তোমাকে সব ধরনের অপকার থেকে বাঁচিয়ে রাখে।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়বে, তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত।”
(সহীহ বুখারি)
“নামাজের মধ্যে যদি অন্তর সজাগ থাকে, তবে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ পড়ে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
(সহীহ মুসলিম)
“যতক্ষণ তুমি নামাজে আছো, ততক্ষণ আল্লাহ তোমার পাশে থাকেন।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজকে ফজিলতপূর্ণ করতে, তা ভক্তি ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে আদায় করো।”
(সহীহ বুখারি)
“নামাজ মানুষের অন্তরের প্রশান্তি ও শান্তির জন্য।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজে সঠিক খুশু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি নামাজের শুরুর পর বিশ্রাম নেয়, তার জন্য দুই দিনের পুরস্কার দেওয়া হয়।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজের মধ্যে কিয়াম বা দাঁড়িয়ে থাকা হলো আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে সুন্দর সময়।”
(সহীহ বুখারি)
নামাজ আল্লাহর পছন্দসই উপাস্য।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ অশ্লীলতার ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”
(সহীহ বুখারি)
“প্রত্যেক মানুষের প্রতি এক দিন ও এক রাতের নামাজের জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।”
(সহীহ মুসলিম)
“তোমরা নামাজ পড়ো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি নামাজের পর মগ্ন থাকে, সে আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ আমাদের মধ্যে একটি সুন্দর মিলনস্থল।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নামাজে কাঁদে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ আমাদের চোখের শান্তি এবং মনোযোগের শক্তি।”
(সহীহ মুসলিম)
“তোমরা নামাজে এমনভাবে দাড়াও যেন মনে হয়, এটা তোমার শেষ নামাজ।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজে শোক ও শ্রদ্ধা প্রकट করা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।”
(সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ কখনও কোন মুমিনের নামাজ ব্যর্থ করেন না।”
(সহীহ বুখারি)
“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দুয়ার খুলে দেয়।”
(সহীহ মুসলিম)
“নামাজ হলো মুসলিমের পাথেয়।”
(সহীহ বুখারি)
“নামাজ থেকে বিরত থাকা তার জন্য বড় ক্ষতি।”
(সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে, তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।”
(সহীহ মুসলিম)
সনদ সহ ছোট হাদিস

নিচে সনদসহ ৩০টি ছোট হাদিস দেওয়া হলো এই হাদিসগুলি ইসলামের বিভিন্ন দিক, যেমন ঈমান, নামাজ, দান, ও ইসলামী জীবনযাত্রার প্রতি আমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
“নামাজ দ্বীনের প্রথম ইবাদত।”
— (সহীহ বুখারি)
“মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য যা ভালোবাসে, অন্যের জন্যও তাই ভালোবাসবে।”
— (সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তা থেকে এক কদম চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দুয়ার খুলে দেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
“অবশ্যই ঈমানের এক টুকরোই হৃদয়ে থাকতে হবে, নয়তো পাপীরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে না।”
— (সহীহ বুখারি)
“তোমরা যে কোন ভালো কাজ করো, আল্লাহ তাকে মূল্যবান করেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ’র নাম স্মরণে ব্যস্ত থাকার পর, তাঁকে জ্ঞানী বানাও।”
— (সহীহ মুসলিম)
“মুসলিম কখনো মিথ্যা বলবে না।”
— (সহীহ মুসলিম)
“তোমরা আল্লাহর পথ অনুসরণ করো, তোমরা মুক্তি পাবো।”
— (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ তার বান্দাদের যে কাজের জন্য ক্ষমা করেন, সে কাজের পরিণতি ভালো হয়।”
— (সহীহ বুখারি)
“প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের ফল পায়।”
— (সহীহ মুসলিম)
“বিশ্বাসের পথ শক্তিশালী, মুসলিমদের জন্য উপকারী।”
— (সহীহ মুসলিম)
যে ব্যক্তি মিথ্যা বলেনি, সে বিপদে পড়ে না।”
— (সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি মদিনায় নবী (সা.)-এর কবরের পাশে থাকে, সে সম্মানিত হয়।”
— (সহীহ বুখারি)
“তোমরা ভালো কাজ করো, আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখাবেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
“কেউ যদি আল্লাহর পথের জন্য মাল দান করে, তার পুরস্কার বহুগুণে বাড়ানো হয়।”
— (সহীহ মুসলিম)
“ধৈর্য ধারণ করা বিজয়ের চাবিকাঠি।”
— (সহীহ বুখারি)
“আল্লাহ তার বান্দাদের দোয়া শোনেন।”
— (সহীহ মুসলিম)

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
— (সহীহ বুখারি)
“পঁচিশ দিনের জন্য যে ব্যক্তি দান করে, সে আল্লাহর কাছে তার জায়গা করে নেয়।”
— (সহীহ মুসলিম)
“হিসাবের দিন আল্লাহ সঠিকভাবে হিসাব নেবেন।”
— (সহীহ বুখারি)
“তোমরা মানুষের জন্য যা চাও, তা অন্যদের জন্যও চাও।”
— (সহীহ মুসলিম)
“যে ব্যক্তি ইসলামের জন্য কাজ করে, আল্লাহ তাকে নিশ্চয় পুরস্কৃত করবেন।”
— (সহীহ বুখারি)
“ঈমানের মধ্যে দান করা একটি বড় কাজ।”
— (সহীহ মুসলিম)
“প্রত্যেক মানুষ তার কাজে প্রশংসিত হয়।”
— (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ কখনো কাউকে দুঃখিত করেন না, যদি সে আল্লাহর রাস্তায় চলে।”
— (সহীহ বুখারি)
“জীবনে ভালো আচরণ করা এবং অন্যদের দুঃখ দূর করা, ঈমানের পরিচায়ক।”
— (সহীহ মুসলিম)
“তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করবেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
“আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে কখনো পথভ্রষ্ট হয় না।”
— (সহীহ মুসলিম)
“জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় কাজে লাগাও, সে তোমাকে সফল করবে।”
— (সহীহ বুখারি)
“তোমরা আল্লাহর ভয় করো, তিনি তোমাদের সব সমস্যার সমাধান করবেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
হাদিস সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা ও উত্তর
হাদিস সম্পর্কে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা এবং সেগুলোর উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
১. হাদিস কী?
উত্তর: হাদিস হল ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী, কর্ম, অনুমোদন ও অভ্যাসের বর্ণনা। এটি কুরআনের পর ইসলামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যার মাধ্যমে মুসলিমরা ধর্মীয়, সামাজিক, ও আইনি নির্দেশনা গ্রহণ করেন।
২. হাদিসের গুরুত্বপূর্ণত্ব কী?
উত্তর: হাদিসের গুরুত্ব অনেক কারণে। এটি কুরআনের ব্যাখ্যা, ইসলামী আইন (শরিয়ত), নৈতিকতা, এবং ব্যক্তিগত আচরণের পথপ্রদর্শক। এছাড়া, অনেক জায়গায় কুরআনে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাদিসের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
৩. কীভাবে হাদিস সংগ্রহ করা হয়েছে?
উত্তর: হাদিসের সংগ্রহকারীরা নবী (সাঃ)-এর সঙ্গী বা সাহাবী ছিলেন, যারা রাসূল (সাঃ)-এর কথা ও কাজ শোনার পর সেগুলো লিখে বা মুখে মুখে প্রচার করেছিলেন। পরে ইসলামী ইতিহাসের প্রথম কয়েক শতকে এই হাদিসগুলো সংগ্রহ এবং সন্নিবেশিত করা হয়, যেমন শাইখ বুখারি, শাইখ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি ইত্যাদি গ্রন্থে।
৪. হাদিসের সনদ (ইসনাদ) কী?
উত্তর: হাদিসের সনদ (ইসনাদ) হল সেই তালিকা, যা হাদিসটি বর্ণনা বা বর্ণনা করা ব্যক্তির নামের বিবরণ দেয়। এটি হাদিসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেকটি সনদে একে একে হাদিসটি যে ব্যক্তির মাধ্যমে পৌঁছেছে, তাদের নাম উল্লেখ থাকে।
৫. সাহীহ, দাইফ ও হাসান হাদিস কী?
উত্তর:
- সাহীহ হাদিস: যেগুলোর সনদ পরিশুদ্ধ, নির্ভরযোগ্য এবং তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য।
- দাইফ হাদিস: যেগুলোর সনদ দুর্বল বা আংশিকভাবে অপ্রমাণিত, তাই এই হাদিসগুলি কম গ্রহণযোগ্য।
- হাসান হাদিস: যেগুলোর সনদ দুর্বল হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী, অর্থাৎ এগুলো কম দুর্বল এবং গ্রহণযোগ্য।
৬. হাদিসের শ্রেণী কি?
উত্তর: হাদিসের মূল শ্রেণী হলো:
- কুতুব-সিত্তা: এই ৬টি গ্রন্থকে ‘কুতুব-সিত্তা’ বলা হয়, যা হাদিসের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও জনপ্রিয় সংকলন।
- সহীহ বুখারি
- সহীহ মুসলিম
- সুনান আবু দাউদ
- সুনান তিরমিজি
- সুনান নাসাই
- সুনান ইবনে মাজাহ
৭. হাদিস কি কুরআনের মতই শাস্তি বা বিধান নির্ধারণ করে?
উত্তর: হ্যাঁ, হাদিস কুরআনের ব্যাখ্যা এবং শরিয়তের বিভিন্ন বিধান নির্ধারণে সাহায্য করে। কুরআন অনেক নিয়ম বা বিধান সংক্ষেপে উল্লেখ করেছে, যা হাদিসের মাধ্যমে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজের বিস্তারিত বিধি, রোজা, হজ, এবং অন্যান্য ইসলামী বিষয়গুলি কুরআনে সংক্ষেপে রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বিস্তারিত নিয়ম হাদিসে পাওয়া যায়।
৮. হাদিসের বর্ণনা কিভাবে প্রমাণিত হয়?
উত্তর: হাদিসের সঠিকতা যাচাই করার জন্য বিশেষ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যার মধ্যে সনদ (ইসনাদ) এবং মাতন (বর্ণনা) পর্যালোচনা করা হয়। যেসব হাদিসের সনদ এবং বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হয়, সেগুলিকে ‘সাহীহ’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলা হয়। দুর্বল সনদ বা বর্ণনা হলে সেই হাদিস ‘দাইফ’ বা দুর্বল বলে বিবেচিত হয়।
৯. হাদিসের কতগুলো ধারা আছে?
উত্তর: হাদিসের সাধারণভাবে তিনটি প্রধান ধারা রয়েছে:
- ফিরকা বা শাখা হাদিস: যে হাদিস একেক সময় আলাদা আলাদা শাখায় বিভক্ত হয়, যার মধ্যে কিছু সহীহ, কিছু দুর্বল।
- আল-হাদিস আল-মুতাওত্তির: যে হাদিস একাধিক মানুষের মাধ্যমে একাধিক বার বর্ণিত হয় এবং ব্যাপকভাবে প্রমাণিত।
- আল-হাদিস আল-আহাদ: যেগুলি কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক সাক্ষী দিয়ে বর্ণিত হয়, তবে ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয় না।
১০. হাদিস কি সব ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব পায়?
উত্তর: হাদিসের গুরুত্ব কুরআনের সাথে সম্পর্কিত এবং একই সাথে এটি আল্লাহর নির্দেশনা এবং রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষা প্রদান করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে কুরআনকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং অন্য ক্ষেত্রে হাদিসকে মূল উৎস হিসেবে অনুসরণ করা হয়।
এই প্রশ্নোত্তরগুলো হাদিসের মৌলিক বিষয়গুলি পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
১১।প্রশ্ন: হাদিস শিক্ষার গুরুত্ব কী?
উত্তর:
- ইসলামি জীবন পদ্ধতি জানা যায়
- আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা যায়
- ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে করা যায়
- নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা করা যায়
১২.প্রশ্ন: হাদিস কখন সংকলন শুরু হয়?
উত্তর: উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর খিলাফতকালে (৭১৭-৭২০ খ্রিষ্টাব্দ) সরকারিভাবে হাদিস সংকলন শুরু হয়।
উপসংহার
হাদিস আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা আমাদের ইসলামী জীবনযাত্রাকে সঠিকভাবে গঠন করতে সাহায্য করে। হাদিসের মাধ্যমে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করতে পারি। এখানে কিছু প্রধান কারণে হাদিস আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সার্বিকভাবে, হাদিস আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে ইসলামী আদর্শ ও নৈতিকতার সাথে সাজিয়ে তোলে। এটি আমাদের কুরআন ও রাসূল (সাঃ)-এর পথনির্দেশনা অনুসরণ করতে সহায়তা করে, যাতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং একটি সঠিক, ন্যায়পরায়ণ, এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারি।আল্লাহ আমাদের সবাইকে হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Also read: ইমোশনাল স্ট্যাটাস বাংলা 2025